AskBangla

custom-rom-logo

2 January 2023

কাস্টম রম কি?

টেকনোলোজি

এন্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা প্রায়ই “কাস্টম রম” নামক শব্দটি শুনে থাকেন। অনেকে এই সম্পর্কে জানলেও অধিকাংশ ব্যবহারকারী এটি সম্পর্কে ভাল ধারনা নেই। আজকে আমরা কাস্টম রম সম্পর্কে জানবো। তার আগে জানতে হবে এন্ড্রয়েড সম্পর্কে।

এন্ড্রয়েড এর বেসিক!

এন্ড্রয়েড একটি ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম যা লিনাক্স এর উপর ভিত্তি করে বানানো। এখানে আমাদের দুইটি জিনিষ এর দিকে খেয়াল করতে হবে। একটি হচ্ছে ওপেন সোর্স আরেকটি হচ্ছে লিনাক্স

ওপেন সোর্স কি?

ওপেন সোর্স হচ্ছে সফটওয়্যার এর একটি বৈশিষ্ট্য। যেসব সফটওয়্যার এর সোর্স কোড বা প্রোগ্রামিং ভাষা উন্মুক্ত থাকে সেইসব সফটওয়্যারকে ওপেন সোর্স সফটওয়্যার বলে। এই সোর্স কোড যে কেউ দেখতে পারে, কিন্তু সেই সফটওয়্যার যে কেউ নিয়ে ব্যাবহার এর জন্য বিভিন্ন লাইসেন্স রয়েছে। যেমন কোনো কোনো সফটওয়্যার যে কেউ চাইলে নিজের মত পরিবর্তন করতে পারে। আবার কেউ চাইলেই সেটি পরিবর্তন করে সেটি বিক্রি করে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যাবহার করতে পারে।

লিনাক্স কি?

লিনাক্স একটি ওপেন সোর্স কার্নেল যেটির উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম বানানো যায়। যেমন: উবুন্টু, কালি, ফেডোরা, ডেবিয়ান, এন্ড্রয়েড, আর্চ ইত্যাদি। ওপেন সোর্স হওয়াতে যে কেউ নিজের মত পরিবর্তন করে নিতে পারে।

এন্ড্রয়েড এর রম/ROM কি?

রম বা ROM এর সম্পূর্ণ অর্থ হল (Read Only Memory) বা যে ডাটা শুধু রিড/পড়া যায় কিন্তু চেঞ্জ করা যায় না। এটি ফোন মেমরির আলাদা একটি পার্টিশন বা ভাগকে নির্দেশ করে। কারণ এতে অপারেটিং সিস্টেম থাকে। অপারেটিং সিস্টেম এর গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ডিলিট হয়ে গেলে সিস্টেম ঠিক মত কাজ করবে না তাই এটি পরিবর্তন এর অনুমতি সাধারণত দেওয়া হয় না।

স্টক রম?

ফোনের প্রস্তুতকারী কোম্পানি ফোনে যে অপারেটিং সিস্টেম তার রম/ROM পার্টিশনে দিয়ে থাকে সেটাকেই স্টক রম বলে। এতে প্রস্তুতকারী কোম্পানি চাইলে বিভিন্ন এড সার্ভিস সহ অপ্রয়োজনীয় এপ্লিকেশন দিয়ে রাখে, যেগুলো ফোনের RAM ইউজ করে ফোকে স্লো করে দেয় এবং ইউজার এর বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই অনেকে ফোনে কাস্টম রম দিতে আগ্রহী হয়।

কাস্টম রম কি?

আমরা আগেই জেনেছি এন্ড্রয়েড একটি ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম। যে কেউ চাইলেই এটি নিজের মন মত পরিবর্তন করে ইউজ করতে পারে। গুগল প্রতিটি এন্ড্রয়েড ভার্শন রিলিজের সময় এগুলো উন্মুক্ত করে দেয়। সেটি নিয়ে নিজের মত কাস্টমাইজড করে নেওয়ার জন্যই একে কাস্টম রম বলে। তবে সেটি তার নিজস্ব মোবাইল ডিভাইসের বিভিন্ন হার্ডওয়ার এর ড্রাইভার যেমন ক্যামেরা, ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ, ডিসপ্লে, স্পীকার এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। এই জন্য এক ফোনের রম অন্য ফোনে নিয়েই ব্যাবহার করা যায় না। এই নিজের ডিভাইসের সাথে সামঞ্জস্য করে নেওয়ার প্রক্রিয়াকেই রম পোর্ট বলে। অনেক এন্ড্রয়েড প্রোগ্রামার/ডেভেলপার নিজেদের শখের বসে আবার অনেকে ক্রাউড ফান্ডিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন ডিভাইসের জন্য কাস্টম রম পোর্ট করে। ব্যাক্তি বিশেষ এই পোর্ট এর কাজ করে বলে এটি ১০০% কাজ করার সম্ভাবনা খুবই কম বলা যায়। কিছু না কিছু ছোটখাটো বাগ/সমস্যা থেকেই যায়।

কাস্টম রম এর সুবিধা

কাস্টম রম এর অনেক সুবিধা রয়েছে। যেমনঃ

  • কোনো বিরক্তিকর এড থাকে না।
  • অপ্রয়োজনীয় এপ্লিকেশন থেকে না বলে RAM ও ব্যাটারি ইউজ কম হয়।
  • বিভিন্ন অপটিমাইজেশন এর জন্য ফোনের পারফরমেন্স অনেক ভাল হয়।
  • অনেক ফিচার যুক্ত হয় যেগুলো সাধারণ প্রস্তুতকারী কোম্পানি দেয় না।
  • প্রস্তুতকারী কোম্পানি এন্ড্রয়েড আপডেট বন্ধ করে দিলেও কাস্টম রম দিয়ে লেটেস্ট এন্ড্রয়েড ভার্শন চালানো যায়।

কাস্টম রম এর অসুবিধা

কাস্টম রম এর সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধা ও রয়েছে। যেমন:

  • ওয়ারেন্টি থাকলে তা চলে যায়।
  • ফোনের ইন্টিগ্রেটি সিকিউরিটি থাকে না।
  • পোর্ট-কারী ডেভেলপার সঠিক ভাবে পোর্ট করতে না পারলে পারফরমেন্স বাড়ার বদলে উলটো কমতে পারে।

কীভাবে কাস্টম রম দেওয়া যায়?

কাস্টম রম দেওয়ার জন্য সবার আগে ফোনের বুটলোডার আনলক করা থাকতে হবে। প্রস্তুতকারী কোম্পানি বুটলোডার লক করে রাখে নিরাপত্তার জন্য। বাট ইউজার চাইলেই কম্পিউটার এর মাধ্যমে তা আনলক করতে পারে। কিছু কিছু কোম্পানি এর কাছে আপ্লাই করতে হয় বুটলোডার আনলক করার জন্য। এপ্লাই করার কয়দিন পর তারা ডিভাইসের জন্য ইউনিক কোড সরবারহ করে। যা দিয়ে ফোনের বুটলোডার আনলক করা যায়। আবার কিছু কিছু কোম্পানি একেবারেই বুটলোডার আনলক করতে দেয় না। যেমন হুয়ায়ে, অপ্পো ইত্যাদি। \

বুটলোডার আনলক এর পর ফোনের কাস্টম রিকোভারী ইনস্টল করতে হয়। বর্তমানে সবচেয়ে পপুলার কাস্টোম রম হচ্ছে TWRP Recovery.। ফোনের সাথে দেওয়া রিকোভারি দিয়ে অফিশিয়াল রম ও ফোন রিসেট ছাড়া বেশি কিছু করা যায় না, তাই কাস্টম রিকোভারি দিতে হয়। কাস্টম রিকোভারি একটি ছোট প্রোগ্রাম বা সফটওয়ার যা দিয়ে ফোনের সিস্টেম এ বিভিন্ন কাজ করা যায়। ফোন চালু অবস্থায় সিস্টেম এর ফাইল পরিবর্তন করলে ফোন ক্রাশ করে একেবারে নস্ট হয়ে যেতে পারে, তাই তা রিকোভারি থেকে করতে হয়। \

কাস্টম রিকোভারি ইন্সটল করার পর তা থেকে ফোনের জন্য পোর্ট করা কাস্টম রম ফ্লাশ/ইন্সটল করা যায়। মনে রাখতে হবে এন্ড্রয়েড এর নিরাপত্তা পলিসির জন্য কাস্টোম রম ইন্সটোল দিলে ফোনের ফোন মেমরি ফরমেট দিতে হয়, নয়তোবা ফোন অন হবে না।

কোথায় আমার ফোনের জন্য কাস্টম রম পাবো?

কাস্টম রম পাওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় ফোরাম হচ্ছে XDA Forum, যা খুবই জনপ্রিয়। এছাড়াও বিভিন্নি টেলিগ্রাম গ্রুপে কাস্টম রম এর কমিউনিটি রয়েছে।